পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালা, ২০২০ (খসড়া)
পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালা, ২০২০ (খসড়া)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
প্রজ্ঞাপন
এস,আর,ও নম্বর-/আইন/২০২০।- পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ৪৯ নং আইন) এর ধারা ৯ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার নিম্নরূপ বিধিমালা প্রণয়ন করিল, যথাঃ-
প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
১। শিরোনাম।- (১) এই বিধিমালা পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালা, ২০২০ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। সংজ্ঞা।-বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কিছু না থাকিলে, এই বিধিমালায়,-
(ক)‘আইন’ বলিতে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩ কে বুঝাইবে;
(খ) ‘উপযুক্ত প্রতিনিধি’ বলিতে সন্তানের কোনো নিকটাত্মীয়, যথা: চাচা, চাচী, ফুফা, ফুফু, মামা, মামী, খালা, খালু, ভাই, ভাবী, ভগ্নি, ভগ্নিপতি, শ্যালক, শ্যালিকা বা এইরূপ রক্তসম্পর্কীয় অথবা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ কোনো আত্মীয়ের পরিবার, বা বিশ্বস্থ ব্যক্তি বা দায়িত্ব নিতে আগ্রহী প্রতিবেশীকে বুঝাইবে;
(গ) ‘কমিটি’ বলিতেক্ষেত্রমত, জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, মহানগর, ইউনিয়ন বা সিটি কর্পোরেশন এর ক্ষেত্রে ওয়ার্ড কমিটিকে বুঝাইবে;
(ঘ) ‘কর্তৃপক্ষ’ বলিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সংস্থার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা কার্যনির্বাহী কমিটি বা উক্ত নামে অভিহিত কর্মপরিষদকে বুঝাইবে;
(ঙ) ‘কেয়ার গিভার’ বলিতে পরিবারের সদস্য ব্যতীত বর্ধিত পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশী বা অনাত্মীয় কোনো ব্যক্তিকে বুঝাইবে যিনি অর্থের বিনিময়ে পিতা-মাতার পরিচর্যা করিবে;
(চ) ‘নিবন্ধন’ বলিতে স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর অধীন কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনকে বুঝাইবে।
(ছ) ‘নিবাসী’ বলিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্রে বসবাসরত পিতা- মাতাকে বুঝাইবে;
(জ) ‘পরিচর্যা’ বলিতে যত্ন সহকারে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচকার্য (Toileting), সময়ানুসারে ঔষধ-পথ্য ও খাবার খাওয়ানো, প্রয়োজনমত বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে সকাল-বিকাল হাঁটানো,চিত্তবিনোদন বা ব্যায়াম করানো বা সঙ্গ দান করাকে বুঝাইবে;
(ঝ) ‘পিতা-মাতা’ বলিতে আইনের ধারা ২ এর দফা (ক) অনুসারে পিতা, ধারা ২ এর দফা (গ) অনুসারে মাতা অথবা তাহাদের উভয়কে এবং ধারা ৪ অনুসারে পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদী এবং মাতার অবর্তমানে নানা-নানীকে বুঝাইবে;
যদি নানা-নানীর অন্য কোন সন্তান না থাকে।
(ঞ) ‘পিতা-মাতা পরিচর্যা কেন্দ্র’ বলিতে পিতা-মাতা বা প্রবীণব্যক্তিদের পরিচর্যা নিশ্চিতকল্পে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত শান্তিনিবাস, বৃদ্ধনিবাস, প্রবীণ নিবাস, বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র বা অন্য কোনো নামে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত প্রতিষ্ঠানকে বুঝাইবে;
(ট) ‘বর্ধিত পরিবার’ বলিতে চাচা- চাচী, ফুফা-ফুফু, মামা-মামী, খালা-খালু, ভাই-ভাবী, ভগ্নি-ভগ্নিপতি, শ্যালক-শ্যালিকা বা এইরূপ রক্তসম্পর্কীয় অথবা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ কোনো আত্মীয়ের পরিবারকে বুঝাইবে;
(ঠ) ‘বিধিমালা’ বলিতে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিধিমালা, ২০২০ কে বুঝাইবে;
(ড) ‘ভরণ-পোষণ’ বলিতে তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত ভরণ-পোষণের ন্যূনতম মানদন্ডের আলোকে বিধি ১১ এর উপ-বিধি (১) অনুসারে পিতা-মাতার পর্যাপ্ত জীবনমান নিশ্চিত করাকে বুঝাইবে;
(ঢ) ‘মহাপরিচালক’ বলিতে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালককে বুঝাইবে;
(ণ) ‘সক্ষম ও সামর্থ্যবান সন্তান’ বলিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ২ এর উপধারা (৯) অনুসারে সংজ্ঞায়িত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ব্যতীত পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয় নির্বাহে সক্ষম সকল ব্যক্তিকে বুঝাইবে, তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয় নির্বাহে সক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও সক্ষম ও সামর্থ্যবান হিসেবে বিবেচিত হইবেন;
(ত) ‘সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান’ বলিতে ‘স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৬১’ এর অধীন নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝাইবে।
(থ) ‘সহায়ক কমিটি’ বলিতে বিধি ৯ এ বর্ণিত পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ সহায়ক কমিটিকে বুঝাইবে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিষয়ক কমিটি ও উহার কার্যাবলি
৩। জাতীয় কমিটি ও উহার কার্যাবলি।-(১) আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে নিম্নবর্ণিত সদস্যের সমন্বয়ে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণবিষয়ক জাতীয় কমিটি গঠিত হইবে:
(ক) মাননীয় মন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;
(খ) মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, যিনি ইহার সহসভাপতিও হইবেন;
(গ) জাতীয় সংসদের স্পীকার কর্তৃক মনোনীত দুইজন সংসদ সদস্য, যাহাদের মধ্যে একজন সরকার দলীয় এবং একজন বিরোধী দলীয় হইবেন (তবে দুইজন সংসদ সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী হইবেন) ;
(ঘ) চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন;
(ছ) সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়;
(ঙ) মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন;
(চ) মহাপুলিশ পরিদর্শক বা তদকর্র্তৃক মনোনীত অন্যূন উপমহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(জ) জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(ঝ) অর্থ বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(ঞ) স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(ট) আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(ঠ) শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(ড) তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(ঢ) মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
(ণ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক মনোনীত উক্ত কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালক;
(ত) মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর;
(থ) মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর;
(দ) জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার একজন পরিচালক;
(ধ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন;
(ন) সরকার কর্তৃক মনোনীত জাতীয় পর্যায়ে প্রবীণ বিষয়ক কার্যক্রম রহিয়াছে এইরূপ প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার একজন প্রতিনিধি;
(প) পরিচালক, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;
(ফ) নির্বাহী সচিব, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ;
(ব) মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতর, পদাধিকারবলে যিনি ইহার সদস্য সচিবও হইবেন;
(২) জাতীয় কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি:
(ক) জেলা কমিটির সুপারিশ অনুমোদন;
(খ) এই আইন ও বিধিমালার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে নীতিমালা প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান;
(গ) কার্যক্রম সম্পর্কে সময় সময় সংশ্লিষ্টদের নিকট হইতে প্রতিবেদন আহ্বান এবং তাহাদের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য প্রয়োজনে সমন্বয় সভার আয়োজন;
(ঘ) পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিষয়ক তহবিল এর বাজেট প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বার্ষিক ব্যয় বিবরণী অনুমেদান;
(ঙ) এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ৩ (তিন) জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত উপকমিটি কর্তৃক সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত পিতা-মাতার পরিচর্যা কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শন, তত্ত্বাবধান, মনিটরিং করিবে।
৪। জেলা কমিটি ও উহার কার্যাবলি।-(১) প্রত্যেক জেলায় নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিষয়ক জেলা কমিটি গঠিত হইবে:-
(ক) জেলা প্রশাসক, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;
(খ) জেলা পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট;
(গ) সিভিল সার্জন;
(ঘ) জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক কর্তৃক মনোনীত একজন সমাজসেবা অফিসার/প্রবেশন অফিসার;
(ঙ) জেলা তথ্য কর্মকর্তা;
(চ) উপপরিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর;
(ছ) জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা;
(জ) উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন;
(ঝ) জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর;
(ঞ) জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত একজন আইনজীবী প্রতিনিধি;
(ট) জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত প্রবীণ বিষয়ক কার্যাবলির সহিত জড়িত সংশ্লিষ্ট জেলার বেসরকারি দুইটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার একজন করে প্রতিনিধি, যদি থাকে;
(ঠ) মেয়রের একজন প্রতিনিধি;
(ড) প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন;
(ঢ) উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, যিনি ইহার সদস্য সচিবও হইবেন।
(২) জেলা কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি:
(ক) সংশ্লিষ্ট জেলার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা;
(খ) জাতীয় কমিটির নির্দেশনা বাস্তবায়ন;
(গ) উপজেলা কমিটি হইতে প্রাপ্ত সুপারিশ অনুমোদন বা প্রয়োজনে অনুমোদনের লক্ষ্যে জাতীয় কমিটির নিকট প্রেরণ;
(ঘ) উপজেলা কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে সময় সময় প্রতিবেদন আহ্বান এবং উক্ত কমিটির কাজের সমন্বয় সাধনের জন্য প্রয়োজনে আন্তঃ কমিটি সভার আয়োজন;
(ঙ) কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনজন সদস্য নিয়ে গঠিত উপকমিটি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত পিতা-মাতার পরিচর্যা কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শন, তত্ত্বাবধান, মনিটরিং করিবে এবং এতদ্সংক্রান্ত প্রতিবেদন জাতীয় কমিটির নিকট প্রেরণ করিবে।
সম্পূর্ণ বিধিমালা পেতে এখানে ক্লিককরুন-
--------------------------------------------------
আরও দেখুন-
অসচ্ছলপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা-২০১৩
----------------------------------------------------
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
কোন মন্তব্য নেই