জাতীয় স্কুল মিল নীতি, ২০১৯ || National School Meal Policy, 2019.
সরকার এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী যৌথভাবে ২০১১ সাল থেকে শুরু করে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, যা বর্তমানে দেশের ১০৪টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করছে। এ কর্মসূচির আওতায় ৩২.৩১ লক্ষ প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীকে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ বিস্কুট সরবরাহ করা হচ্ছে।
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও অটুট স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিদ্যালয়ে গমনোপযাগী বয়সের শিশুদের এ সকল চাহিদা পূরণ ও শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্কুল মিল কার্যক্রম বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নীতি থাকা প্রয়োজন। এ প্রয়োজনের নিরিখেই এ নীতিটি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ নীতিতে বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে তা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণসহ শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এ কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও শিক্ষা কার্যক্রমে স্থানীয়দের অধিকতর ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র সৃষ্টির পাশাপাশি কার্যক্রমটি স্থানীয় অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করায়ও সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। প্রণীত এ নীতির আলোকে স্কুল মিল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০'-এর শিক্ষা-লক্ষ্য অর্জন ও মধ্যম আয়ের দেশের পথে অগ্রযাত্রায় যোগ হতে পারে নতুন মাত্রা।
বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল ৯টি দেশের একটি। এ দেশের প্রতিটি নাগরিক সাংবিধানিকভাবে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা এবং যুক্তিসংগতভাবে বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশ ভোগের সমান অধিকারী (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫)। একই পদ্ধতির সমমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত সকল শিশুর অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানে রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭)। রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে জনগণের পুষ্টি ও জনজীবনের উন্নতি সাধনে অঙ্গীকারবদ্ধ (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮)।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সরকার এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী যৌথভাবে ২০১১ সাল থেকে শুরু করে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, যা বর্তমানে দেশের ১০৪টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করছে। এ কর্মসূচির আওতায় ৩২.৩১ লক্ষ প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীকে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ বিস্কুট সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি স্কুল দিবসে প্রতিটি শিশুকে উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ৭৫ গ্রাম বিস্কুট সরবরাহ করা হয়। সময়ে সময়ে বিস্কুটের স্বাদের বৈচিত্র্য আনয়নপূর্বক বিস্কুটকে উপাদেয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৩টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে রান্না-করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। স্কুল মিল কর্মসূচিকে সর্বজনীন করার বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
সরকার পরিচালিত খাদ্য সহায়তা ও পুষ্টি কার্যক্রমে দরিদ্র পরিবার, বিশেষত নারী ও শিশুরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের মূল ভিত্তি হচ্ছে শিশু জনসমষ্টি, যারা প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ের অধিকাংশ বিদ্যালয় দুই শিফটে চলে। বিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত শিখন সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের সংযোগ সময় (contact hour) বৃদ্ধির জন্য এক শিক্ট চালু করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে শিশুদের দীর্ঘ সময় বিদ্যালয়ে অবস্থান নিশ্চিত করা ও ক্ষুধা নিবারণের জন্য বিদ্যালয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিশেষত দরিদ্র শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য তা অত্যন্ত জরুরি।
সরকার বিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত শিখনফল অর্জন, শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি, ছেলে-মেয়ের বৈষম্যসহ শিক্ষায় সকল ধরনের বৈষম্য নিরসন, প্রাথমিক শিক্ষার কার্যকারিতা বৃদ্ধি প্রভৃতির জন্য নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসব কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ বিভিন্ন অংশীজন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এই কর্মসূচির আওতায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহের ফলে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় শতভাগে উন্নীত হয়েছে, নীরব বিচ্যুতি (silent exclusion) ও ঝরেপড়া (drop out) উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শ্রেণিকক্ষ উন্নয়ন, শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতির উন্নয়নসহ শিক্ষায় জনঅংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
লক্ষ্য:
ক. প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী দেশের সকল শিশুকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে স্কুল মিল নীতির আওতায় এনে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় যথার্থ অবদান রাখা;
খ. এই কার্যক্রম শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিসহ গ্রাম ও শহর, ধনী ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে শিক্ষার মানের পার্থক্য দূরীকরণে সহায়ক হবে। শিশুদের সাময়িক ক্ষুধা নিবারণ ও পুষ্টি সহায়তার স্থায়ী কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষার্থীদের মেধার উৎকর্ষ সাধন, চিন্তা ও কল্পনাশক্তির বিকাশ, সৃজনশীলতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিপূর্বক তাদের দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখা।
উদ্দেশ্য:
ক. দেশের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে ভর্তি, উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, পাঠে মনোনিবেশ ও বিদ্যালয়ে ধরে রাখা;
খ. নিরাপদ খাবার পরিবেশন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনের জন্য পুষ্টি ও খাদ্য-নিরাপত্তার প্রমিত মান তৈরি ও প্রয়োগ করা;
গ. স্কুল চলাকালে শিক্ষার্থীর ক্ষুধা নিবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সংযোগ সময় বৃদ্ধি করা, যাতে শিক্ষার্থীরা অধিক সময় বিদ্যালয়ে ক্ষুধামুক্ত ও প্রাণবন্ত অবস্থায় আনন্দময় ও অনুকূল পরিবেশে শিক্ষা লাভ করতে পারে;
ঘ. স্থানীয় কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে বিশেষ করে মায়েদেরকে সঙ্গে নিয়ে দেশীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণপূর্বক স্কুল সময়ে শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং স্বাস্থ্যবান, সবল, সক্ষম, মেধাবী জনবল তৈরির মজবুত ভিত্তি গঠন করা।
অত্র ব্লগের সম্মানীত পাঠকদের জন্য উক্ত নীতিমালাটি নিচে প্রদান করা হলো, যা উপর-নিচ স্ক্রল করে দেখা যাবে।
--------------------------------------
আরও দেখুন-
সরকারিপ্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯
------------------------------------------------------
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের “ফেসবুকপেজে” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই