সাধারন, ধর্মীয় ও নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটির দিনগুলোর পটভূমি ও তাৎপর্য
সাধারন, ধর্মীয় ও নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটির দিনগুলোর পটভূমি ও তাৎপর্য। সম্মানীত ভিজিটর, সরকারি-বেসরকারি প্রজ্ঞাপন ও চিঠি-পত্র সমৃদ্ধ এ বাংলা ব্লগ সাইটে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। অনুগ্রহপূর্বক, পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখুন।
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আমার এই অলগেজেটস ডট কম সাইটে নতুন এসে
থাকেন; তাহলে, সাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত নতুন পোষ্টের আপডেট পেতে-প্লিজ, সাইটের “ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে সাইটটির সঙ্গেই থাকুন। আর যদি ইতোমধ্যে আপনি “ফেজবুক পেজে” লাইক দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে আবারও স্বাগত জানাচ্ছি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রজ্ঞাপন ও চিঠি-পত্র একত্রে, একসঙ্গে পাবার এ পাঠকপ্রিয় বাংলাদেশী বাংলা ব্লগে। আশা করি, পরবর্তীতে আবারও এসে ধন্য করবেন “সকল গেজেট এক ঠিকানায়” শিরোনামের এ বাংলা ব্লগে।
থাকেন; তাহলে, সাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত নতুন পোষ্টের আপডেট পেতে-প্লিজ, সাইটের “ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে সাইটটির সঙ্গেই থাকুন। আর যদি ইতোমধ্যে আপনি “ফেজবুক পেজে” লাইক দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে আবারও স্বাগত জানাচ্ছি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রজ্ঞাপন ও চিঠি-পত্র একত্রে, একসঙ্গে পাবার এ পাঠকপ্রিয় বাংলাদেশী বাংলা ব্লগে। আশা করি, পরবর্তীতে আবারও এসে ধন্য করবেন “সকল গেজেট এক ঠিকানায়” শিরোনামের এ বাংলা ব্লগে।
পাঠক, আপনাদের সকলের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে এ ব্লগে আয়োজন করেছি-প্রাথমিক শিক্ষার অফিস আদেশ ও পত্র, প্রাথমিক শিক্ষার প্রজ্ঞাপন, মাধ্যমিক শিক্ষার প্রজ্ঞাপন ও পত্র, উচ্চ শিক্ষার প্রজ্ঞাপন ও পত্র, শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও ম্যানুয়াল, শিক্ষকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ ও ম্যানুয়াল, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন ও পত্র, পাঠ্য বইয়ের ই-সংষ্করণ, ধর্মীয় ই-বুকসমূহ, আইন ও বিধিমালার ই-বুকসমূহ, জাতীয় পরিচয় পত্র বিষয়ক প্রজ্ঞাপন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের প্রজ্ঞাপন ও পত্র, জাতীয় বেতন স্কেলসমূহ, বিভিন্ন আর্থিক সুবিধার প্রজ্ঞাপন ও পত্রসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি গুরূত্বপূর্ণ গেজেট, পরিপত্র ও পত্রাদি। এবার আসা যাক, আজকের পোষ্টের কথায়।
--------------------------------------------------
আরও দেখুন-
--------------------------------------------------
সাধারন, ধর্মীয় ও নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটির দিনগুলোর পটভূমি ও তাৎপর্য।
প্রতি বছর চাকুরিজীবিরা সাধারন, ধর্মীয় ও নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ভোগ করে থাকেন। এ ছুটিগুলোর মধ্যে সব ছুটি সম্পর্কে অনেকেরই ধারনা থাকে না। সে বিষয়টি ওভারকাম করবার জন্য সরকারিভাবে উল্লেখিত ছুটিগুলোর পটভূমি ও তাৎপর্য সম্বলিত একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যা আজতের আর্টিকেলের মূল বিষয়। নিচে আমরা প্রথমে ক্যাটাগরি ভিত্তিক ছুটির নামগুলো দেখব এবং তারপর কয়েকটি ছুটির পটভূমি ও তাৎপর্য জানবো। পুস্তিকাটির সফট কপি সংগ্রহে রাখবার জন্য ডাউনলোড লিঙ্ক আর্টিকেলের শেষভাগে দেওয়া থাকবে।
সাধারন ছুটিসমূহ:
১) শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
২) জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশুদিবস।
৩) স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস
৪) মে দিবস
৫) বৌদ্ধ পূর্ণিমা (বৈশাখী পূর্ণিমা)
৬) জুমাতুল বিদা
৭) ঈদুল ফিতর
৮) ঈদুল আযহা
৯) জাতীয় শোক দিবস
১০) শুভ জন্মাষ্টমী।
১১) শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা (বিজয়া দশমী)
১২) ঈদ-ই-মিলাদুন্নবি (সা.)
১৩)বিজয় দিবস
১৪) যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিবস (বড় দিন)
নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটিঃ
১) বাংলা নববর্ষ
২) শবে বরাত
৩) শবে কদর
৪) পবিত্র আশুরা (১০ই মুহররম)
ঐচ্ছিক ছুটি (মুসলিম পর্ব):
১) শবে মেরাজ
২) হিজরি নববর্ষ
৩) আখেরি চাহার শোম্বা
৪) ফাতেহা-ই-ইয়াজদহম
ঐচ্ছিক ছুটি (হিন্দু পর্ব):
১) শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা।
২) শ্রী শ্রী শিবরাত্রি ব্রত
৩) শুভ দোলযাত্রা
৪) শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব
৫) চৈত্রসংক্রান্তি
৬) শুভ মহালয়া।
৭) শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজা
৮) শ্রী শ্রী শ্যামাপূজা
ঐচ্ছিক ছুটি (খ্রিষ্টান পর্ব):
১) স্টার সানডে
ঐচ্ছিক ছুটি (বৌদ্ধ পর্ব):
১) মাঘী পূর্ণিমা
২) আষাঢ়ী পূর্ণিমা
৩) মধু পূর্ণিমা (ভাদ্র পূর্ণিমা)
৪) প্রবারণা পূর্ণিমা (আশ্বিনী পূর্ণিমা)
ঐচ্ছিক ছুটি (পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য):
১) বৈসাবি উৎসব
এবারে উক্ত ছুটিগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটির পটভূমি ও তাৎপর্য জানা যাক।
আখেরি চাহার শোম্বা
আখেরি চাহার শোম্বা মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনেতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্মরণে পালিত ইসলামি দিবস। হিজরি বছরের সফর মাসের শেষ বুধবার এ দিবস পালিত হয়। আরবি ও ফারসি উভয় ভাষায়ই ‘আখের’ শব্দের অর্থ ‘শেষ’, আর ফারসিতে ‘চাহার শোম্বা’ অর্থ ‘চতুর্থ বুধবার। মহানবি (সা.) তাঁর জীবনের শেষ পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে এদিন কিছুটা উপশম বোধ করে গোসল করেন এবং পথ্য গ্রহণ করেন। মদিনাবাসীরা মহানবি (সা.)-এর সুস্থতার সংবাদ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে তাঁকে একনজর দেখে গেলেন। সকলে তাঁদের সাধ্যমত দান করলেন, শুকরিয়া নামায আদায় করলেন। এ কারণে এ দিনকে একটি শুভদিন হিসেবে গণ্য করা হয় এবং মুসলমনেরা এ দিবস উদযাপন করেন। উল্লেখ্য যে, মহানবি (সা.) এর পরবর্তী রবিউল আওয়াল মাসে ইন্তেকাল করেন।
ইরান ও উপমহাদেশের মুসলমানগণ যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করেন। দিল্লির মুঘল বাদশাহগণও যথেষ্ট মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালন করতেন। বাংলাদেশে এদিন ঐচ্ছিক ছুটি থাকে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকে। এদিন মুসলমানগণ নফল নামায পড়েন ও দোয়া-জিকির করেন। কেউ কেউ দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করেন।
শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব
হরিচাঁদ ঠাকুর হিন্দুধর্মীয় সাধক ও মতুয়া সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক গুরু। ১২১৮ বঙ্গাব্দের (১৮১১ খ্রি.) ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষীয় ত্রয়োদশী তিথিতে গোপালগঞ্জ (বৃহত্তর ফরিদপুর) জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে এই আবির্ভাব উৎসব পালিত হয়।
তাঁর পিতা যশোমন্ত ঠাকুর ছিলেন একজন মৈথিলি ব্রাহ্মণ এবং নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব। হরিচাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল খুবই সামান্য। পাঠশালা অতিক্রম করে তিনি কয়েক মাস মাত্র স্কুলে গিয়েছিলেন। পরে স্কুলের গণ্ডিবদ্ধ জীবন ভাল না লাগায় স্কুল ত্যাগ করে তিনি মিশে যান সাধারণ মানুষের সঙ্গে। প্রকৃতির আকর্ষণে তিনি রাখাল বালকদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। তখন থেকেই তাঁর মধ্যে এক স্বতন্ত্র ভাবের প্রকাশ ঘটে। দৈহিক সৌন্দর্য, স্বভাব-সারল্য, সঙ্গীতপ্রিয়তা এবং পরোপকারী মনোভাবের কারণে তিনি বন্ধুদের নিকট খুবই প্রিয় ছিলেন। তিনি ভাল ভজনও গাইতে পারতেন। হরিচাঁদ বাল্যকাল থেকেই ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির; বযয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। তাঁর আধ্যাত্মিক মহিমা সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি আছে। এমনও বলা হয় যে, তিনি আধ্যাত্মিক শক্তিবলে মানুষের রোগমুক্তি ঘটাতে পারতেন। তিনি চৈতন্যদেবের প্রেম-ভক্তির কথা সহজসরলভাবে প্রচার করতেন। তাঁর এই সাধন পদ্ধতিকে বলা হয় মতুয়াবাদ’, আর এই আদর্শে যারা বিশ্বাসী তাদের বলা হয় মতুয়া।
মতুয়াবাদ সত্য, প্রেম ও পবিত্রতা এই তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ মতবাদে সকল মানুষ সমান; জাতিভেদ বা সম্প্রদায়ভেদ মতুয়াবাদে স্বীকৃত নয়। হরিচাঁদ নিজে ব্রাহ্মণ-সন্তান হয়েও সমাজের নিম্নস্তরের লোকদেরই বেশি করে কাছে টেনেছেন; তাদের যথার্থ সামাজিক মর্যাদা দিয়েছেন। তাই দেখা যায়, তাঁর শিষ্যদের সিংহভাগই সমাজের নিম্নশ্রেণির লোক। তারা তাঁকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করে। হরিচাঁদ সন্ন্যাসজীবনে বিশ্বাসী ছিলেন না; তিনি ছিলেন সংসারী এবং সংসারধর্ম পালন করেই তিনি ঈশ্বরপ্রেমের বাণী প্রচার করেছেন। তাঁর ধর্মসাধনার মূলকথা হলো:
“গৃহেতে থাকিয়া যার হয় ভাবোদয়।
সেই যে পরম সাধু জানিও নিশ্চয়।।"
তিনি এদেশের অবহেলিত সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ এবং সনাতন ধর্মে একনিষ্ঠ থাকার প্রেরণা জুগিয়েছেন।
হরিচাঁদ ১২৮৪ বঙ্গাব্দের (১৮৭৭) ২৩ ফাল্গুন বুধবার ইহলীলা সংবরণ করেন। তাঁর জীবন ও আদর্শ নিয়ে কবিয়াল তারকচন্দ্র সরকার শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত গ্রন্থ রচনা করেন। ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ওড়াকান্দিতে দেশ-বিদেশের মতুয়ারা সম্মিলিত হন এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ইস্টার সানডে
ইস্টার সানডে হলো খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় উৎসব। নিউ টেস্টামেন্টের বর্ণনা অনুযায়ী যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করার পরে, তৃতীয় দিন অর্থাৎ রবিবার তিনি ক্যালভারিতে পুনরুত্থান করেন। যিশুর পুনরুত্থানের ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য খ্রিষ্টানগণ এ দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে। চল্লিশ দিনব্যাপী উপবাস, প্রার্থনা এবং অনুশোচনার মাধ্যমে ইস্টার পালন করা হয়। চল্লিশ দিনব্যাপী উপবাসের শেষ সপ্তাহকে বলা হয় পুণ্য সপ্তাহ।
মাঘী পূর্ণিমা
মাঘী পূর্ণিমা বৌদ্ধদের একটি ধর্মীয় উৎসব। এদিন বুদ্ধদেব তাঁর পরিনির্বাণের (মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেন। কথিত আছে যে, বুদ্ধের এরূপ সংকল্প গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ ভীষণ ভূকম্পন শুরু হয়। ভিক্ষুগণ এর কারণ জানতে চাইলে বুদ্ধ বলেন, তাঁর পরিনির্বাণের সঙ্কল্পের কারণেই এরূপ হয়েছে; অর্থাৎ তথাগতের জন্ম, মৃত্যু ও বুদ্ধত্ব লাভ কালে জগৎ এমনিভাবে আলোড়িত হয়।
বুদ্ধের পরিনির্বাণের কথা শুনে উপস্থিত ভিক্ষুরা বিষযন্ন ও শোকাভিভূত হলে বুদ্ধ তাঁদের বলেন, ‘মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, এজন্য দুঃখ করা অনুচিত। তোমরা সংকল্পবদ্ধ ও দৃঢ়চিত্ত হয়ে ধর্মচর্চা কর, তবেই জন্ম-জরা-ব্যাধি-মৃত্যুর এই সংসার উত্তীর্ণ হয়ে দুঃখকে জয় করতে পারবে। অর্থাৎ এই দিনটির তাৎপর্য হলো, আত্মশক্তির উন্নয়ন এবং সকল প্রকার ক্লেশ বিনাশপূর্বক কল্যাণময় নির্বাণ লাভের সামর্থ্য অর্জন। এ দিনটির আরও একটি শিক্ষা হলো, মানুষ যদি আধ্যাত্মিক সাধনায় পূর্ণতা লাভ করে তাহলে সে নিজের জীবন-মৃত্যুকেও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
এদিন প্রতিটি বিহারে বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ, ভিক্ষুসংঘকে পিণ্ডদান, প্রদীপপূজা, অনিত্যভাবনা ও ধর্মীয় সভার আযয়োজন করা হয়। দিনটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বৈসাবি উৎসব
বৈসাবি বাংলাদেশের তিনটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব। বর্ষবরণ উৎসবকে ত্রিপুরারা বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই ও চাকমারা বিজু বলে অভিহিত করে, এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে বৈসাবি নামের উৎপত্তি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পুরনো বছরের কালিমা আর জীর্ণতাকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় তারা। সাধারণত বছরের শেষ দুইদিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি পালিত হয় বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়।
বৈসু উৎসব ত্রিপুরাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। বৈসু উৎসব একটানা তিন দিন পালন করা হয়। বৈসু উৎসবের প্রথম দিন হারি বৈসু। এই দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা ঘরদোর লেপেপোঁছে, বসতবাড়ি কাপড়চোপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে, বিশেষ একপ্রকার গাছের পাতার রস আর হলুদের রস মিশিয়ে গোসল করে। ফুল দিয়ে ঘরবাড়ি সাজায়। দেবতার নামে নদীতে বা ঝর্ণায় ফুল ছিটিয়ে খুমকামীং পূজা দেয়। কেউ কেউ পুষ্পপূজা করে।
এদিন মহিলারা বিন্নি চাউলের পিঠা ও চোলাই মদ তৈরি করে। পুরুষেরা বাঁশ ও বেত শিল্পের প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলায় মেতে উঠে। হারি বৈসু উৎসবের দিন থেকে এরা গরয়া নৃত্য পরিবেশন শুরু করে। এ নৃত্য সাত দিন থেকে আটাশ দিন পর্যন্ত চলে। নাচ শেষে গরয়া পূজার ব্যবস্থা করা হয়। উৎসবের দ্বিতীয় দিন বিসুমাতে ত্রিপুরারা নববর্ষকে স্বাগত জানায়, ধূপ, চন্দন ও প্রদীপ জ্বেলে পূজা দেয় ও উপাসনা করে। সবাই গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাচন, সেমাই ও মিষ্টি খায়। এছাড়া এদিন তারা নিরামিষ ভোজন করে। কোনো প্রাণী বধ করে না। অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন বিসিকাতালে আমিষ খাবার গ্রহণে বাধা নেই। এদিনও ফুল দেওয়া হয় ও উপাসনা করা হয়। তারা বযয়ে:জ্যেষ্ঠদের গোসল করিয়ে পায়ের কাছে পূজার নৈবেদ্য হিসেবে ফুল রাখে এবং প্রণাম করে।
মারমারা
পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার উৎসবকে সাংগ্রাই উৎসব বলে। তারা
বৈশাখের প্রথম দিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালন করে বাংলা নববর্ষ। পাচন, পিঠা
এবং নানা মুখরোচক খাবারের আয়োজন করে মারমা জনগোষ্ঠী। সবাই নতুন পোশাক পরে, একে
অপরের বাড়ি যায় এবং কুশল বিনিময় করে। সব বয়সের নারীপুরুষ সম্মিলিতভাবে
নাচ আর গানে মেতে উঠে। মারমা বৃদ্ধরা অষ্টশীল পালনের জন্য মন্দিরে যায়। মারমা
জনগোষ্ঠীর এ দিনের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে জল অনুষ্ঠান বা পানি খেলা। মারমা ভাষায় জল
অনুষ্ঠানকে বলা হয় রিলংপোয়ে। পানিকে পবিত্রতার প্রতীক ধরে নিয়ে মারমা
তরুণতরুণীরা পানি ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করে নেয়।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই